নেত্রকোণা শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় স্থানীয় একটি হাজি বিরিয়ানি নামের হোটেলের বিরিয়ানি খেয়ে অসুস্থ হয়েছেন সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ২০ জন। তিনজনকে আশংকাজনক অবস্থায় বুধবার রাতে আধুনিক সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।
এ দিকে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ওই হোটেলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
নেত্রকোণা সদর উপজেলার ভূমি সহকারী কমিশনার মো: খবিরুল আহসান এই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) একটি অনুষ্টানে ৪৫ জনের খাবার নেয়া হয় নেত্রকোণা শহরের দত্ত মার্কেটের বিপরীতে হাজী বিরিয়ানী নামের একটি হোটেল থেকে। অনুষ্ঠানটিতে বেশিরভাগই সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষার্থী সংস্কৃতিমকর্মীসহ অন্যরাও উপস্থিত ছিলেন। পরে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া উপস্থিত সকলকে দুপুরের খাবার দেয়া হলে অনেকেই অনুষ্ঠানস্থল পৌর ভবনের হলরুমে বসেই খেয়ে ফেলেন। আবার অনেকে বাড়িতে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ক্ষেতে যান।
এতে করে মঙ্গলবার রাত থেকে অনেকের বমিসহ ডায়রিযা শুরু হয়। তাদের অনেকেই নিজেরা চিকিৎসা করেন। তারমধ্যে কারো কারোর অবস্থা আশংকাজনক হলে তাদেরকে রাতেই হাসপাাতলে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যায় আমাদের নেত্রকোণা পত্রিকার কম্পিউটার অপারেটর মানিক ও মধ্য রাতে মাই টিভির সাংবাদিক আনিসুর রহমানের স্ত্রী ভর্তি হন।
পরে ভোর রাতে যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিক কামাল হোসাইনের স্ত্রীকে ভর্তি করা হয়। এদিকে বাড়িতেই চিকিৎসা নেন সাদ্দাম, শিক্ষার্থী তানভীর, নিউজ ২৪ এর সাংবাদিক সোহান আহমেদ, বৈশাখী টিভির সানাউল হক সানি ও তার শিশু সন্তান, সংবাদ প্রতিদিনের আব্দুর রহমান ও প্রথম আলোর সাংবাদিক পল্লবসহ তার শিশু সন্তান।
এ ছাড়াও নাম না জানা আরো বেশ কজন হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। অন্যদিকে হাসপাতালের ডায়রিয়া ইউনিটে জায়গা না থাকায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রোগীদেরকে মেঝে এবং বারান্দায় রাখা হচ্ছে।
পরে খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট শহরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। তবে ভুক্তভোগীদের মধ্যে মাই টিভির আনিসুর রহমান ও যমুনা টিভির কামাল হোসাইন দাবী করেন এ সকল হোটলগুলোতে কোন রকম নিয়ম নীতি না মেনে মানুষকে মৃত্যু মুখে ফেলে দেয় অতি মুনাফার লোভে। তারা বাশি ও পঁচা খাবার বিক্রি করে। কিছু মানুষ কম টাকায় পাওয়া এসকল খাদ্য লুফে নেন। তারা বলেন অনেকে সাধারণ মানুষ খাবার খেয়ে অনসুস্থ হয়ে বলার জায়গা পায় না। এর জন্য তারা দৃষ্টানমূলক শাস্তির দাবী করেন তারা।
অন্যদিকে জেলা সুজনের সভাপতি সাংবাদিক শ্যামলেন্দু পাল বলেন, ‘আমরা এই খাবার খেয়ে শুধু অসুস্থই না আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এদের ভোক্তা অধিকার আইনে প্রতিনিয়িত মনিটরিংয়ে রাখা দরকার। সেইসাথে এই হাজি বিরিয়ানী নামে মানুষ ঠকানো হোটেলগুলোকে সিলগালা করে দেয়া দরকার।’
বুধবার রাতে চিকিৎসা দেয়া অবস্থায় মেডিকেল অফিসার ডা. উচ্ছাস সরকার বলেন, খাদ্যে বিষক্রিয়া অর্থাৎ ফুডপয়জন হওয়ার কারণে এটি হয়েছে। বিরিয়ানির চাল হয়তো সিদ্ধ হয়নি অথবা নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবারটা নতুন খাবারের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালের কর্তব্যরত চিকিৎিসক মেডিকেল অফিসার মো. রুহুল আমীন সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রাতের একজন রোগী সকালে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি গিয়েছে। আমি অরো দুজনকে এসে পেয়েছি। তাদের অবস্থা খারাপ ছিলো।’
এ দিকে হাজী বিরিয়ানীর হোটেল মালিক জহিরুল ইসলাম দাবী করেন, তিনি চার বছর ধরেই ব্যবসা করে যাচ্ছেন। তার খাবার বেশ ভালো। তবে কম দাম হওয়ায় মানুষ আসে। তবে ভোক্তা অধিকার আইনে কি কি নিয়ম আছে হোটেল চালানোর জন্য তা মানা হয় কিনা সে ব্যাপারে তিনি কোন কথা বলেননি।